কাগজ প্রতিবেদক ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের ছাত্রী রিক্তা আক্তারের (২১) দাফন কুষ্টিয়া কুমারখালীতে সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার রাত ১১ টার দিকে উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের মহেন্দ্রপুর কবর স্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। এসময় নিহতের স্বজন, সহপাঠী ও গ্রামবাসীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ময়নাতদন্ত শেষে রাত ৮ টার দিকে রিক্তার লাশবাহী গাড়িটি নিজ বাড়িতে পৌঁছাই। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা ধরমপুর পূর্বপাড়া ভাড়া বাসা থেকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেলে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক রিক্তাকে মৃত ঘোষণা করে। রিক্তা কুমারখালীর জগন্নাথপুর ইউনিয়নের জোতপাড়া গ্রামের লিয়াকত আলীর মেয়ে ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তার স্বামী আব্দুল্লাহ ইসতিয়াক রাব্বি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ড উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামে। পুলিশ ও পরিবার সুত্রে জানা গেছে, রাবি শিক্ষার্থী রাব্বি ও রিক্তার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরে প্রায় দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ধরমপুর পূর্বপাড়া ভাড়া বাসায় থাকতেন। বিবিধ বিষয়াদি নিয়ে তাঁদের মাঝে কলহ চলছিল। এরইমধ্যে গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২ টার দিকে ভাড়া বাসা থেকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেলে নিয়ে যায় তাঁর স্বামী। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক রিক্তাকে মৃত ঘোষণা করে। আরো জানা গেছে, এঘটনার হত্যার অভিযোগ তুলে মতিহার থানায় মামলা করেন নিহতের বাবা। পুলিশ নিহতের স্বামী ও এক সহযোগীকে আটক করে। নিহতের বাবা লিয়াকত জোয়ার্দার অভিযোগ করে বলেন, মা আমার গত চার পাঁশ মাস কারো সাথে ভালো ভাবে কথা বলতো না, সব সময় মন খারাপ করে থাকতো, কি যে হয়েছিল ও জানে আর আল্লাহ জানে। তবে একথা সত্যি যে রাব্বি আমার মেয়েকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পর শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেছে। থানায় মামলা করেছি। সুষ্ঠ বিচার চাই। নিহত রিক্তার রাবির আইন বিভাগের দুই সহপাঠী মুজাহিদুল ইসলাম ও আহসান হাবীব জানায়, রিক্তা অত্যন্ত ভদ্র প্রকৃতির মেয়ে ছিলো। পর্দা করে চলাফেরা করতো। শুক্রবার মধ্য রাতে আমাদের কাছে খবর আসে রিক্তা সুইসাইড করেছে,মেডিকেলে যেয়ে দেখি রিক্তার স্বামী রাব্বি কান্নাকাটি করছে। রাব্বির কান্নার অভিনয় দেখেই আমাদের সন্দেহ হয় যে রিক্তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা সঠিক বিচারের দাবীতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। এ বিষয়ে নিহতের সেজো ভাই এনামুল হক বলেন, ওরা দুজন দুজনকে পছন্দ করত। পরে প্রায় দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে ওদের বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পরে দুজনের মাঝে বিবিধ বিষয় নিয়ে সন্দেহের ঝাল বাঁধে। সন্দেহের জেরেই রাব্বি আমার বোনকে ব্যাপক মারপিট করে হত্যা করেছে। সারা শরীরে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। এর সঠিক বিচার চাই আমি। মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার আলী তুহিন বলেন, ময়নাতদন্তের পর মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে লাশ দাফনের জন্য কুমারখালীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে নিহতের স্বামী ও তার বন্ধুকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত চলছে আশা করি খুব দ্রুতই সত্য উন্মোচন হবে।
Leave a Reply