এনএনবি : ভারতের উপরাষ্ট্রপতি ও সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার প্রধান জগদীপ ধনখড়ের আচমকা পদত্যাগের পেছনে কেন্দ্র সরকারের চাপ ছিল বলে বিরোধীদের অনেকেই সন্দেহ করছেন।সোমবার সন্ধ্যায় অনেকটা হুট করেই পদত্যাগপত্র জমা দেন ধনখড়। এর পেছনে ‘স্বাস্থ্য’কে কারণ দেখিয়ে তিনি বলেন, চিকিৎসকদের পরামর্শেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।মঙ্গলবার সকালেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে নেন বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার, এনডিটিভি।সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনই ভাইস প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ বিরোধীদের মধ্যে সন্দেহ বাড়িয়ে দিয়েছে।ধনখড় এমনকি মঙ্গলবার বিদায়ী ভাষণও দেননি, এখানেও ‘স্বাস্থ্যগত কারণ’ দেখানো হয়েছে, বলছে একাধিক সূত্র।আনন্দবাজার লিখেছে, বিচারপতি যশবন্ত বর্মার অপসারণের দাবিতে সোমবার বিরোধীদের তরফে একটি প্রস্তাব জমা পড়ে রাজ্যসভায়। যশবন্তের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধার করার পর থেকেই তাকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠেছিল।যশবন্তকে অপসারণের প্রস্তাব নিয়েই ধনখড়ের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধ দেখা দেয় বলে একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে দাবি করেছে এনডিটিভি।
সোমবার ধনখড় বিরোধীদের ওই নোটিসটি গ্রহণ করেন এবং উচ্চকক্ষের সেক্রেটারি জেনারেলকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন। এই পদক্ষেপ ভাল ভাবে নেয়নি কেন্দ্র।
বিরোধীদের দেওয়া প্রস্তাব রাজ্যসভায় গৃহীত হওয়ায় বিচারব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার কৃতিত্ব হাতছাড়া হয় কেন্দ্রীয় সরকারের। তারা এ নিয়ে ফোনও করে উপরাষ্ট্রপতিকে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ধনখড়ের কথা কাটাকাটি হয়, এরপর ক্ষমতাসীনরা তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনারও হুমকি দেন, তারই ধারবাহিকতায় উপররাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করেন বলে দাবি একাধিক সূত্রের।
সোমবার বর্ষাকালীন অধিবেশনের শুরুর দিকেও তাকে বেশ ‘খোশমেজাজে’ দেখা গেছে দাবি করে একাধিক বিরোধী এমপি বলছেন, উপরাষ্ট্রপতিকে মোটেও ‘অসুস্থ’ মনে হয়নি।
কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি ও রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে সংশয় প্রকাশ করেছেন ধনখড়ের পদত্যাগের কারণ নিয়ে। মঙ্গলবার সকালে সংসদচত্বরে প্রবেশের সময় তিনি বলেন, “কী কারণ, তা একমাত্র তিনিই (ধনখড়ই) জানেন। এই নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। হয় তিনি জানেন, নয়তো সরকার জানে।”
রাজ্যসভার শিবসেনা (উদ্ধব) সাংসদ সঞ্জয় রাউত আরও এক ধাপ এগিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, স্বাস্থ্যের কারণে পদত্যাগ, এই তত্ত্ব তিনি মানতে নারাজ। এর নেপথ্যে কোনও বড় রাজনীতি রয়েছে বলে সন্দেহ আছে। তার কথায়, “এর নেপথ্যে রাজনীতির কোন খেলা রয়েছে, তা শীঘ্রই প্রকাশ্যে চলে আসবে। উপরাষ্ট্রপতির ইস্তফা কোনও সাধারণ ঘটনা নয়।” রাউতের বক্তব্য, সোমবারও তিনি ধনখড়কে দেখেছেন। তখন তাকে দৃশ্যত সুস্থই লাগছিল। উদ্ধব শিবিরের অপর রাজ্যসভা-সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীরও বক্তব্য, সোমবার ঠিকঠাকই দেখাচ্ছিল ধনখড়কে।
যারা সোমবার ধনখড়কে সামনাসামনি দেখেছেন, এমন অনেক সাংসদই ধনখড়ের অসুস্থতা নিয়ে সন্দিহান। কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ অখিলেশ প্রসাদের কথায়, সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ধনখড়ের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। তখন তাকে বেশ খোশমেজাজেই দেখাচ্ছিল। তার একমাত্র চিন্তা ছিল যাতে অধিবেশনকে সচল রাখা যায়। তবে কি ধনখড়কে বাধ্য করা হল ইস্তফা দিতে? একই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন রাজ্যসভায় কংগ্রেসের আর এক সাংসদ সৈয়দ নাসির হোসেন। তিনি বলেন, “গতকাল পর্যন্তও তিনি (ধনখড়) রাজ্যসভার কাজকর্মে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি কি নিজেই ইস্তফা দিলেন, না কি তাকে বাধ্য করা হয়েছে, এটি প্রকাশ্যে আসা উচিত।”
ধনখড়ের আচমকা ইস্তফা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এমকে স্ট্যালিনের ডিএমকে-ও। স্ট্যালিনের দলের সাংসদ টিআর বালু মঙ্গলবার সকালে বলেন, ‘চাপের কারণেই’ ধনখড় পদত্যাগপত্র দিয়েছেন বলে তিনি মনে করেন । ধনখড়কে ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল করা হয়। ওই সময়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে ধনখড়ের সংঘাত লেগে থাকত। পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালে তিনি উপরাষ্ট্রপতি হন।
সংবিধান অনুসারে, ভারতের উপরাষ্ট্রপতিই সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা পরিচালনা করেন। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান পদে থাকাকালীন বিরোধী সাংসদেরা বার বার তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। কক্ষ পরিচালনায় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। আনা হয়েছিল অনাস্থা প্রস্তাবও, যদিও শেষ পর্যন্ত তা টেকেনি।
ধনখড়ের পদত্যাগে যে কেন্দ্রীয় সরকারের সায় আছে তা বোঝা গেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মঙ্গলবার সকালে দেওয়া পোস্টেই। ওই পোস্টে উপরাষ্ট্রপতিসহ বিভিন্ন পদে ধনখড়ের কাজের কথা উল্লেখ করে তার সুস্বাস্থ্য কামনা করেন মোদী।
Leave a Reply