1. nannunews7@gmail.com : admin :
November 9, 2025, 9:14 pm
শিরোনাম :
কুষ্টিয়ার নতুন ডিসি ইকবাল হোসেন, আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন হবিগঞ্জে কুষ্টিয়ার পদ্মার চরে তিন জেলার যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশী অভিযান দৌলতপুরে ক্লিনিক মালিক সমিতির উদ্যোগে অপারেশনমূল্য নির্ধারণ মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আলমডাঙ্গায় ছাত্রদলের আলোচনা সভা কিশোরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মোটরসাইকেল ছিনতাই, থানায় অভিযোগ মেছো বিড়াল সংরক্ষণে জীবননগরে ‘ওয়াইল্ড লাইফ এন্ড নেচার ইনিশিয়েটিভ’-এর জনসচেতনতা মূলক প্রচারণা কুষ্টিয়ায় চলতি বছরে সাপের কামড়ে ৮ জনের মৃত্ব্য সিরিজে লিড নিল নিউজিল্যান্ড নভেম্বরের ৮ দিনে রেমিট্যান্স এলো ৯১৯৮ হাজার কোটি টাকা মির্জা ফখরুল দেশের সব সংকট নাটক, মানুষ আসলে ভোট দিতে চায়

আদম ব্যবসায়ীর রজিবুলের মাধ্যমে তানজির লিবিয়ায় যেয়ে নির্যাতনের শিকার

  • প্রকাশিত সময় Saturday, July 12, 2025
  • 148 বার পড়া হয়েছে

‘খাবার দিতো না, তিনবেলা শুধু মারতো’
কাগজ প্রতিবেদক ॥ লিবিয়ায় মানবপাচার চক্রের টর্চার সেল থেকে মুক্তি পেয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরেছেন তানজির শেখ (২২)। দীর্ঘ নয় মাস সেখানে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এই যুবক। ঠিক মতো খেতে দেওয়া হতো না। বেঁধে রাখতো, তিনবেলা লোহার রড ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হতো। বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারপিটের ভিডিও পরিবারকে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হতো। মুক্তিপণ নিয়ে তানজিরকে ছেড়ে দিয়েছে মানবপাচার চক্র। গত বুধবার (৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ৭টায় বুরাক এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন তানজির শেখ । এরপর কুষ্টিয়ায় নিজ বাড়িতে আসেন। তিনি কুষ্টিয়া পৌরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের জগতী স্টেশন বাজার এলাকার সিরাজ শেখের ছেলে। আড়াই বছর আগে কুষ্টিয়ার রবিজুল দালালের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট ভিসায় লিবিয়ায় গিয়েছিলেন তিনি। ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে থেকে দফায় দফায় ৩৪ লাখ টাকা নিয়েছে রবিজুল। সেসব টাকা ফেরত ও রবিজুলের শাস্তি চায় ভুক্তভোগী পরিবার। এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, কুষ্টিয়ায় মানবপাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এসব মামলা আমরা গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে দেখছি। কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তানজিরের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হবে এবং এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। তানজিরের সাথে ছিলেন আরেক ভুক্তভোগী ঝিনাইদহের মতিউর রহমান সাগর। তিনিও মুক্তি পেয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরেছেন। আইনি জটিলতা কাটিয়ে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের প্রত্যাবাসন সম্পন্ন হয়েছে। তাদের ফিরিয়ে আনতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড, ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) লিবিয়া মিশন এবং লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। লিবিয়ার মানবপাচার চক্রের টর্চার সেলে তানজির ও সাগরের মতো প্রায় ৩০০ জন বাংলাদেশিকে বন্দি করে নির্যাতন করা হয়। ভুক্তভোগীদের বাড়ি মাদারীপুর, মাগুরা, শরীয়তপুর, সিলেট, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, নওগাঁ, নাটোর, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায়। বন্দিদের পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। লিবিয়ায় দীর্ঘ নয় মাস বন্দিশালায় নির্যাতনের শিকার তানজির শেখ বলেন, মুক্তিপণের দাবিতে আমাকে বন্দি করে রাখা হয়। বেঁধে রাখতো, তিনবেলা লোহার রড ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হতো। নির্মমভাবে নির্যাতন মারপিট করা হয়। কঠোর অত্যাচার করা হতো। খাবার দিতো না, তিনবেলা শুধু মারতো। মারতে মারতে শরীর ফাটিয়ে ফেলতো। ক্ষত জায়গায় ইনফেকশন হয়ে পচে যেত। কোনো ওষুধ দিত না। ভাত দিত না। সারাদিনে ৫ টাকা দামের একটা পাউরুটি ও অল্প একটু লবণাক্ত পানি খেতে দিত। লবণাক্ত পানি খাওয়ার কারণে শরীর আরও বেশি পচে যেত। না খাওয়ার কারণে শরীর একদম শুকিয়ে যায়। সকল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যায়। এজন্য মার খাইতে খাইতে অনেকে মরে যায়। মনে হতো আমিও মারা যাব। তিনি আরও বলেন, ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে নয় মাস পর আমি মুক্তি পেয়েছি। আমার সাথে ওইখানে থেকে ঝিনাইদহ সাগর নামে একজন মুক্তি পেয়েছে। আমরা ছাড়া পাওয়ার আগের রাতে দুজন মারা গেছে। তাদের একজনের বাড়ি কুমিল্লায়। তাদের দুজনকে মারতে-মারতে মেরে ফেলা হয়েছে। তাদের দুজনেরই হাত-পা পচে গিয়েছিল। মাফিয়াদের আস্তানায় বন্দিদের তিন বেলা মারপিট করা হতো। আর মারের চেয়ে উকুনের অত্যাচার ছিল আরও যন্ত্রণাদায়ক। উকুনকে জীবন শত্রু মনে হতো। আমি ও সাগর বন্দিখানায় ঢোকার তিন দিন পরে একজন বন্দিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। আমাদের চোখের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। আমার চোখের সামনে তিনজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। যারা বিদেশে যেতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে তানজির শেখ বলেন, লিবিয়া মাফিয়াতে ভরা। দালালের মাধ্যমে লিবিয়াতে গিয়ে আমি ও ঝিনাইদহের মতিউর রহমান সাগর দুজন নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছি। এজন্য দালালের মাধ্যমে লিবিয়াতে যাওয়ার দরকার নেই। কারণ বাংলাদেশের দালালরাই লিবিয়ানদের খারাপ বানিয়েছে। বাঙালিদের প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে লিবিয়া মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করা হয়। এরপর আটকে রেখে মুক্তিপণের টাকা আদায় করার জন্য নির্যাতন করা হয়। দালালের মাধ্যমে লিবিয়াতে গিয়ে ঠিকমতো হাঁটা চলাফেরা করা যায় না, ঠিকমতো থাকা খাওয়া ও কাজ করা যায় না। কোনো নিরাপত্তা পাওয়া যায় না। চক্রের এক সদস্য কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি এলাকার রবিজুল ইসলাম। তার মাধ্যমেই লিবিয়ায় যান তানজির। রবিজুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে তানজির বলেন, রবিজুল লিবিয়াতে দীর্ঘ ১২ বছর ছিল। মাফিয়া চক্রের সাথে রবিজুল দালালের সুসম্পর্ক। সেও ওই চক্রের সদস্য। আমার বাবা রবিজুলের মাধ্যমে আমাকে লিবিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। ট্যুরিস্ট ভিসায় আমাকে প্রথমে দুবাই পাঠিয়েছিল, সেখানে তিন দিন থাকার পর মিশরে পাঠায়। সেখানে সিয়াম নামে তাদের দালালের কাছে ২১ দিন ছিলাম। এরপর তার মাধ্যমে লিবিয়াতে পাঠানো হয়। সেখানে একটি মাদরাসায় চাকরি দেন। সেখানে ১৯ হাজার টাকা বেতন দিত। এই টাকা কিছুই হয় না। সেখানে অনেক কষ্ট হতো। ৯ মাস বুকে কষ্ট চাপা রেখে চাকরি করি। এরপর আমি দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিই। বিষয়টি রবিজুল জানতে পারে। এরপর ভালো কাজ দেবে বলে আমার বাবার কাছে থেকে আরও সাড়ে ৭ লাখ টাকা নেয়। এরপর সে আমাকে লিবিয়ার মাফিয়া চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। তারা আমাকে নিয়ে ফাঁকা একটি জায়গায় তাদের বন্দিখানায় নিয়ে যায়। এরপর আমার ওপরে নির্যাতন শুরু করে। তিনটি ঘরে ১০০ জন করে মোট ৩০০ জনকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। দালাল রবিজুল আমাদের বলেছিল- থাকা খাওয়া ফ্রি এবং মাসে ৪০ হাজার টাকা বেতন। সে প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে লিবিয়ায় পাঠায় এবং লিবিয়ার মাফিয়া চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। বিক্রি হয়ে যাওয়াদের বন্দি করে নির্মম নির্যাতন করা হয় এবং মুক্তিপণের দাবি করা হয়। রবিজুল দালালের খপ্পরে পড়ে আমি মরতে বসেছিলাম। রবিজুল আমাদের কাছে থেকে ৩৪ লাখ টাকা নিয়েছে। আমি টাকা ফেরত চাই, একই সাথে রবিজুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক। এই চক্র সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, লিবিয়ার ওই মাফিয়া চক্রে ১৫-২০ জন সদস্য রয়েছে। তাদের মধ্যে ৫/৭ জন লিবিয়ার নাগরিক। প্রধান মাফিয়া লিবিয়ার আলী। উনি ওসামার ভাগ্নে বলে পরিচিত। মাফিয়া চক্রের সাথে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন যুক্ত আছে। তাদের বাসা মাদারীপুর, সিলেট ও শরীয়তপুর। তাদের মধ্যে একজনের নাম পিচ্চি সোহেল, তার বাড়ি মাদারীপুর আর কুষ্টিয়ার রবিজুল। তানজিরের বাবা সিরাজ শেখ বলেন, ভালো চাকরি ও ভালো বেতনের প্রলোভন দিয়ে আমার ছেলেকে লিবিয়ায় পাঠায় রবিজুল। তার সাথে ১১ লাখ টাকায় চুক্তি ছিল। প্রথমে ৫ লাখ টাকা দিই, এরপর আমার ছেলেকে লিবিয়াই পাঠিয়ে দেয়। এরপর বাকি ৬ লাখ টাকা পরিশোধ করি। এরপর ইতালি পাঠানোর কথা বলে আমার ছেলেকে মাফিয়া চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। ছেলে বন্দি থাকা অবস্থায় রবিজুল আরও ২৫ লাখ টাকা দাবি করে। এর কিছুদিন পর রবিজুল বাড়ি থেকে পালিয়ে আত্মগোপনে যায়। এরপর নলখোলা গ্রামের আলামিন নামে একজন আমাদের সাথে যোগাযোগ করে এবং আমার ছেলেকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবে বলে প্রলোভন দেয়। সে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেয়। এতে কোনো কাজই হয়নি। এরপরে মাফিয়াদের পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে আমি আমার ছেলেকে ছাড়িয়ে এনেছি। রবিজুল ও আলামিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। একই সাথে আমি আমার টাকা ফেরত পেতে চাই। নির্যাতনের শিকার তানজিরের মা চম্পা খাতুন বলেন, রবিজুল দালাল প্রলোভন দিয়ে আমার ছেলেকে বিদেশে পাঠায়। এরপর তাকে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। মাফিয়ারা মুক্তিপণের দাবিতে আমার ছেলেকে বেঁধে নির্মমভাবে নির্যাতন করে, মারপিট করেছে। আমার ছেলে মরা মানুষের সাথে শুয়ে ছিল। রবিজুল আমাদের ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। প্রতিবাদ করতে গেলে রবিজুল আমার ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দিত। আমরা গরিব মানুষ। সবকিছু বিক্রি করে ও ধারদেনা করে এই টাকা দিয়েছি। আমরা টাকা ফেরত চাই।
প্রতিবেশী হালিম বলেন, ভালো চাকরির প্রলোভন দিয়ে রবিজুল দালাল তানজিরকে বিদেশে পাঠিয়েছিল। এরপর তানজিরকে ওই দেশের মাফিয়া চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। এরপর ৩৪ লাখ টাকা নিয়েছে রবিজুল ও আলামিন। এমন গরিব একটি পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে তারা। ধারদেনা করে ও সবকিছু বিক্রি করে রবিজুলকে টাকা দিয়ে পথে বসেছে এই পরিবারটি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত রবিজুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের পাটিকাবাড়ি গ্রামের মিয়াপাড়ার আয়নাল মন্ডলের ছেলে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরও সংবাদ
© All rights reserved © 2020 Kushtiarkagoj
Design By Rubel Ahammed Nannu : 01711011640