বশিরুল আলম,আলমডাঙ্গা থেকে ॥ আলমডাঙ্গায় শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিন গতকাল রোববার প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। মণ্ডপে মণ্ডপে সাংস্কৃতিক অনুষ্টান, নৃত্য,গান,কবিতা আবৃত্তি,শুদ্ধ স্বরে মন্ত্রপাঠের মধ্যদিয়ে সারাদিন আনন্দ মুখরিত করেছেন।
ভক্তরা আজ দেবী দুর্গাকে সিঁদুর দানের মাধ্যমে পুরুষের জীবন সুন্দর ও সুস্থ হয়ে উঠুক এই কামনা করেছেন। পরে আরতি, শোভাযাত্রাসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার রথতলা দুর্গামন্দির, ক্যানেল পাড়া দুর্গা মন্দির, বাবুপাড়া, স্টেশন পাড়া,পুরাতন বাসস্ট্যান্ড ঠাকুর পাড়া,মাদ্রাসা পাড়া, গোবিন্দপুর হরিতলা, আনন্দধাম, দাসপাড়া,ও কালিদাসপুর দুর্গামন্দিরের প্রতিমা আলমডাঙ্গা কুমার নদে বিসর্জন দেওয়া হয়। হিন্দুধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভুজা দেবী দুর্গা, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাঁকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তাঁর এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মধ্যে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব। দোলায় বা পালকিতে আগমনের পর এবার দেবী দুর্গার গমন হচ্ছে ঘোটক বা ঘোড়ায়। মন্ডপে মন্ডপে বিদায়ের সুর। গতকাল বিজয় দশমিতে সন্ধ্যা থেকেই পৌর এলাকার বিভিন্ন মন্দির থেকে প্রতিমা নিয়ে ঢাক ঢোল পিটিয়ে ক্যানেলে এসে হাজির হয়।এর পর তারা শেষ বারের মত মা’দুর্গাকে প্রনাম জানিয়ে কুমার নদে প্রতিমা বিষর্জন দেয়। প্রতিমা বিসর্জন পুর্ব আলমডাঙ্গা কুমার নদের পাড়ে বিশাল মেলা বসে, সেখানে সকল ধর্মের মানুষ মেলা থেকে বিকিকিনি করে। নারী, পুরুষ, যুবক,যুবতী,সকলে দল বেধে পুজা দেখতে ভীড় করে। আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদি ইসলাম, ওসি শেখ গনি মিয়া,সহকারি কমিশনার ভুমি দেবাসিষ বসু সহ প্রশাসনের অফিসার বৃন্দ পুলিশ, আনছার,বিজিবির সদস্য বৃন্দ নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল।এছাড়াও আলমডাঙ্গা উপজেলা পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ডাঃ অমল কুমার বিশ্বাস,অশোক কুমার সাহা, বিদ্যুৎ কুমার সাহা,আশিষ কুমার সাহা, গৌতম কুমার পাল,পরিমল কুমার কালু ঘোষ,লিপন কুমার বিশ্বাস,মদিন্দ্রনাথ দত্ত,সুশিল কুমার ভৌতিকা,বিশ্বজিৎ শাধুখা,পলাশ আচার্জ,হারান অধিকারি, প্রশান্ত অধিকারি,সুনিল কুমার সাধুখা, তন্ময় শীল,বিজয় কুমার সিহি,,প্রশান্ত বিশ্বাস,জয়দেব ঘোষ,সহ মন্দির কমিটির অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।তবে প্রতিবারের মত এবছরো সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাবে শেষ হলো দুর্গোৎসব। রাত ৭টার পর থেকে একে একে সকল মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।এবারও পৌর এলাকার প্রতিমা বিসর্জনের সাথে কালিদাসপুর দুর্গামন্দিরের প্রতিমা বিসর্জন এখানে দেওয়া হয়েছে।গত শনিবার বিকেলে আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার সনাতন ধর্মালম্বি রথতলা পূজামণ্ডপ ও ক্যানেলপাড়া সর্বজনীন পূজা উদ্?যাপন কমিটির মণ্ডপে গিয়ে দেখা যায়, ভক্তদের ভিড় তুলনামূলক কম। ছোট ছোট দলে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে মণ্ডপে আসছিলেন, মাকে প্রণাম ও প্রার্থনা করে পুরোহিতের কাছ থেকে প্রসাদ নিয়ে অন্য কোনো মণ্ডপের উদ্দেশে চলে যাচ্ছিলেন। এ সময় সাউন্ড সিস্টেমে দুর্গাপূজাকে ঘিরে তৈরি বিভিন্ন গান বাজছিল।
বিকেল চারটার দিকে রথতলা মন্দিরে যান গোবিন্দপুরের বাসিন্দা সৌমেন পাল, সঙ্গে ছিলেন সৌমেনের মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান। তাঁরা প্রথমে মণ্ডপে দেবীর সামনে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করেন। পরে পুরোহিতের কাছ থেকে প্রসাদ নিয়ে প্রণামী দেন। পরে সৌমেন বলেন, ‘এবার মাকে আরাধনার জন্য আমরা কম সময় পেয়েছি। মায়ের চলে যাওয়ার সময় হয়েছে আজ। মায়ের কাছে সবার জন্য মঙ্গল ও কল্যাণ কামনা করেছি।’শাস্ত্রমতে,গতকাল রবিবার দেবীর দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শেষ হয়েছে। মা বিদায় নিয়েছেন।
Leave a Reply