কুমারখালীর তরুণমোড়ে সকালের বাজার বেচাকেনায় জমজমাট
কুমারখালী প্রতিনিধি ॥ মারখালীর তরুণমোড়ে দেশীয় প্রজাতির হরেক রকমের মাছ ও টাটকা সবজি বেচাকেনায় জনপ্রিয়তা পাচ্ছে সকালের বাজার।
এই বাজার নিয়ে নানাজন নানা মন্তব্য করেন। কেউ বলেন, সকালের বাজার, কেউ বলেন, দেড় ঘন্টার বাজার। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৬ টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত জমজমাট বেচাকেনা চলে এই বাজারে। আর সকাল ৮ টার পর থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে ক্রেতা ও বিক্রেতার ভীড়। বেশ কয়েক বছর যাবৎ কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের শেখ ওয়াজেদ আলী মার্কেটের সামনে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে চলছে এই সকালের বাজার। শুরুর দিকে এই বাজারের ক্রেতা ছিলেন, খুব সকালে প্রাত: ভ্রমণে বের হওয়া নারী-মানুষেরা। কিন্তু এখন প্রতিদিনই দূর-দূরান্তের ক্রেতারা মোটরসাইকেল- বাইসাইকেল, ভ্যান-রিক্সা, অটো-সিএনজিতে ক্রেতারা আসেন খাল বিলের দেশীয় মাছ সহ বাড়ির আঙিনায় চাষ করা সবজি, কিংবা ছোটখাটো কৃষকদের উৎপাদিত টাটকা সবজি ক্রয় করতে। মুলত: বাজারটি দেশীয় মাছের জন্যই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সরেজমিনে দেখাযায়, এই বাজারে খাল-বিলের বিলুপ্ত প্রায় হরেক রকমের মাছ নিয়ে বসে আছেন অনেকেই। এ সব মাছ বর্শি দিয়ে, ফাঁদ পেতে অথবা জাল পেতে ধরা হয়েছে। মাছের মধ্যে – কই-জিয়ল (শিং), শোল-টাকি, চ্যাং, বোয়াল, পাঙ্গাস, খলিসা,পুঁটি, মোয়া, নানা জাতের বাইম, গোপরে, তেলটুপুরি মাছ, ছোট-বড় ইলিশ, স্থানীয় পুকুর জলাশয়ের ছোট বড় পোনা মাছ সহ পদ্মা ও গড়াই নদীর সব ধরণের মাছ দেখা যায়। এ ছাড়াও মাঝে মাঝেই মাইকিং করে গরু, মহিষ, খাসি ও ভেড়ার মাংস বিক্রি করা হয় এই বাজারে। সেইসাথে অনেকেই গৃহপালিত রাজহাঁস, পাতি হাঁস, দেশী মোরগ-মুরগি সহ দেশি হাঁস- মুগির ডিম বিক্রি করতে আসেন এখানে।একজন সরকারি চাকরিজীবি মোহাম্মদ আলী জানান, চাকরির সুবাদে কুমারখালীতে বসবাস করছি কয়েক বছর যাবৎ। এ উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই সকালে এই বাজার থেকে দেশীয় বিলুপ্ত প্রায় নানা প্রজাতির মাছ সহ প্রয়োজনীয় টাটকা সবজি ক্রয় করে আসছি। এ সবের পাশাপাশি হাঁস-মুরগি, দেশি ডিম, তরতাজা পশুর মাংস সহ দেশীয় নানা ফল সাশ্রয়ী মুল্যে এই বাজার থেকে ক্রয় করি। স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী শরিফুল ইসলাম বলেন, এই বাজারের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির হরেক রকমের মাছ পাওয়া যায় এবং বাড়িতে চাষ করা লাউ সহ লাউশাক, পুঁইশাক, লাল ও সবুজ শাক এবং নানাধরণের ফল এখানে পাওয়া যায় খুব সকালে। এজন্যই সব শ্রেণীর ক্রেতাদের কাছে বাজারটির গুরুত্ব বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখাগেছে, সরকারী চাকরিজীবি, স্কুল- কলেজের শিক্ষক, বিভিন্ন মসজিদের ইমামগণ সহ বিভিন্ন পেশায় মানুষ প্রাত:ভ্রমণে বেরিয়ে প্রয়োজনীয় মালামাল কিনে দ্রুত বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। এ সময় কিছু সংখ্যক নারী ক্রেতাদের মাছ সহ সবজি ক্রয় করতে দেখাযায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারী ক্রেতা জানান, হাঁটতে এসেছি কয়েকজন এক সাথে। এখন ফিরে যাবো তাই এই বাজারে এসেছি কিছু বাজার করতে। তাদের কেউ কৈ মাছ কিনেছেন, কেউ পিয়ালী মাছ, কেউ কিনেছেন মুলা শাক। সরাসরি তারা এসে পছন্দমতো মালামাল কিনতে পারছেন এজন্য তারা খুশি।
বিক্রেতা রুস্তম সেখ জানান, খুব সকালে যখন যা বিক্রির উপযোগী হয় তা নিয়েই তরুণমোড় সকালের বাজারে আসি। এক দেড় ঘন্টার মধ্যেই সবকিছু বেচাকেনা হয়ে যায়। তারপর বাড়ি ফিরে নাস্তা করে অন্য কাজে যাই। এখানে যা বিক্রি হয় সব নগদ টাকায়, বাঁকিতে বিক্রি করতে হয়না। জানাগেছে, এই বাজারে মাছ, শাক-সবজি সহ যাবতীয় মালামাল বিক্রি করলেও কাউকে খাজনা দিতে হয়না।
Leave a Reply