ফয়সাল,আলমডাঙ্গা থেকে ॥ দীর্ঘদিন পরকিয়া থেকে বিরত করতে না পেরে অবশেষে নিজের বোনকে প্রথমে গায়ের ওড়না পেচিয়ে শ^াসরোধে হত্যার পর জবাই করে মৃত্ব্য নিশ্চিত করে ঘাতক ভাই আলমগীর। এমন তথ্যই জানিয়েছে গত ২৩ অক্টোবর বিকেলে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে গৃহবধু মঞ্জুরার হত্যাকারী ভাই আলমগীর।
জানা যায়, পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে হত্যাকারী আলমগীর কবীর স্বীকার করে যে, বিয়ের পর থেকেই স্বামীসহ তার বোন মিম এক সঙ্গে তাদের বাড়ীতে বসবাস করত। বিয়ের কিছুদিন পরে মিম তার আপন খালাতো বোনের স্বামীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। বিবাহিত বোন তার উপর খালাতো বোনের স্বামীর সঙ্গে পরকিয়া এমন ঘটনা মেনে নিতে পারেনি ভাই আলমগীর। বেশ কয়েকবার বোন মিমকে সেখান থেকে ফিরে আসতে অনুরোধ করে। কিন্তু তার বোন প্রেমের সম্পর্ক থেকে ফিরে আসতে নারাজ ছিল এবং প্রতিনিয়ত তাদের পরকিয়া চালিয়ে আসছিল। অবশেষে বোনকে হত্যার পরিকল্পনা করে আলমগীর। পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক গত ২১ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে মিমকে কৌশলে বাড়ির পাশে আমবাগানে ডেকে নিয়ে যায় এবং কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে মিমের ওড়না দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে। হত্যার পর মরদেহটি বেগুন ক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে ধারালো দা দিয়ে সে তার বোন মিমকে জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরবর্তীতে ঘটনা অন্যদিক প্রবাহিত করার জন্য আলমগীর ওই দা দিয়ে নিজের মাথায় তিনটি পোঁচ দেয় এবং আমগাছে থাকা দড়ি নিয়ে নিজে নিজেই হাত-পা বেঁধে চিৎকার করতে থাকে। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করলে অপহরণের নাটক সাজিয়ে তাদের বিভ্রান্ত করে। এ ঘটনায় গত সোমবার (২৩ অক্টোবর) দর্শনা থানায় নিহত মিম আক্তার মঞ্জুরার স্বামী সুরুজ মিয়া বাদী হয়ে ৩০২/৩৪ ধারায় মামলা করেন। মামলা রুজুর ৭ ঘণ্টা পর চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল-মামুনের নির্দেশে সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা, চুয়াডাঙ্গা ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চে (ডিবি) অফিসার ইনচার্জ ফেরদৌস ওয়াহিদ, ডিবির সাব-ইন্সপেক্টর শহিদুল বাশার, সাজ্জাদ হোসেন, মুহিদ হাসান, সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর রজিবুল হক অভিযানে নামেন। মামলার বাদী নিহত মিম আক্তার মঞ্জুরার স্বামী সুরুজ মিয়া ও আশপাশের লোকজনের বক্তব্য পর্যালোচনা এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, গত শনিবার ২১ অক্টোবর রাতে আলমগীর কবীর (৩২) তার বোন মিম আক্তার মঞ্জুরাকে হত্যা করে। এবং মামলা রুজুর ৭ ঘণ্টা পর পুলিশের তদন্তে জানা গেল চুয়াডাঙ্গা দর্শনা পৌর এলাকার মোহাম্মদপুর পাড়ায় বোন মিম আক্তার মঞ্জুরার (২৮) হত্যাকারী তারই আপন ভাই আলমগীর কবীর। এ ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। আদালতে ঘটনার বিষয়ে আলমগীর তার বোন হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানা গেছে। পরে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
Leave a Reply