দৌলতপুর প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের ধর্মদহ গ্রামে বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকা আত্মসাৎ, সরকারি ঘর দেয়ার নামে অর্থ লেনদেন এবং প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন ভাতাভোগীদের নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে তার শ্বশুর বগুড়ার বজলুর রহমান ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে ভাতার টাকা উত্তোলন করেছেন। সোমবার (১০ নভেম্বর) সকালে প্রায় ৩০–৫০ জন ভাতাভোগী নারী ও পুরুষ গ্রামে মাইকিং করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। তাদের অভিযোগ, গত দুই বছর ধরে অধিকাংশ ভাতাভোগী নিয়মিত টাকা পাচ্ছেন না। সমাজসেবা অফিস ও ইউপি অফিসে ঘুরেও কোনো ফল হয়নি, বরং অপমানের শিকার হতে হয়েছে। ৬৪ বছর বয়সী সুলতান হোসেন বলেন, “দেড় বছরে মাত্র একবার ভাতার টাকা পেয়েছি। ইউএনও অফিসে গিয়ে জানতে পারি, আমার নামে থাকা টাকা অন্য একটি মোবাইল নম্বরে যাচ্ছে। পরে খোঁজ নিয়ে দেখি, সেটি আমজাদ মেম্বারের শ্বশুর বজলুর রহমানের।” তিনি আরও বলেন, “আমজাদ মেম্বারের কাছে গেলে বলেন, পরে আসবে। সমাজসেবা অফিসে গেলে জানায়, টাকা গেছে অন্য নম্বরে।” একই গ্রামের সুরাতন নেছা অভিযোগ করেন, “সরকারি ঘর দেয়ার কথা বলে আমজাদ মেম্বার আমার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু ঘর দেননি।” লিটন নামের এক ব্যক্তি জানান, “আমার স্ত্রীর মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড করার কথা বলে দেড় বছর আগে আমজাদ মেম্বার ৬ হাজার টাকা নিয়েছেন। এখনও কার্ডও হয়নি, টাকাও ফেরত দেননি।” এ বিষয়ে ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন বলেন, “হ্যাঁ, প্রায় ১০ জন ভাতাভোগীর টাকায় ভুল হয়েছে। এটা আমার ভুল।” — এরপর তিনি ফোন কেটে দেন এবং আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেনের শ্বশুর বজলুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া গেছে। আদাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাকি বলেন, “গরিবের ভাতার টাকা আত্মসাৎ করার কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগ প্রমাণিত হলে মেম্বারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” দৌলতপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, “ভাতা ভোগীদের মোবাইল নম্বর সংক্রান্ত বিষয়ে অনেক সময় নানা সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে নিজেদের মোবাইল নম্বর না দিয়ে মেয়ের বা ছেলের নম্বর ব্যবহার করেন। ফলে টাকা অ্যাকাউন্টে গেলেও তা অনেক সময় গোপন থাকে। প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে কমিটি রয়েছে। সুবিধাভোগীরা তাদের মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য তথ্য সেই কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে আমাদের দপ্তরে জমা দেন। এরপর আমরা প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে ঊর্ধ্বতন দপ্তরে প্রেরণ করি। ওই অঞ্চলে যে ঘটনাটি ঘটেছে, আমরা তা তদন্ত করে দেখব এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যাতে প্রকৃত ভাতা ভোগী তার প্রাপ্য টাকা পান। একই সঙ্গে দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল হাই সিদ্দিকী জানান, “এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখনো আমি পাইনি। তবে অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি ভাতা ভোগীরা যাতে তাদের প্রাপ্য টাকা পান, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
Leave a Reply