আলমডাঙ্গা ব্যুরো ॥ চুয়াডাঙ্গায় জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন, “চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রোগীরা সেবা নিতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন, অথচ অনেক ডাক্তার সময়মতো হাসপাতালে উপস্থিত না থেকে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখেন—এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না।” তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যারা নিয়ম ভঙ্গ করবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। গতকাল (রবিবার) সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক এই হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, “রোগীরা দূর-দূরান্ত থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকবে, আর ডাক্তাররা সময়মতো হাসপাতালে না এসে চেম্বারে বসে রোগী দেখবেন—এটা চলবে না। এমন ঘটনা কারও চোখে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানান, আমরা সরাসরি অ্যাকশন নেব।” ডিসি আরও বলেন, “এখন আর আলোচনা নয়, অ্যাকশন শুরু হবে। মাদক নির্মূলে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যেসব এলাকায় মাদক কেনাবেচা চলছে, সেসব স্পট চিহ্নিত করে অবিলম্বে অভিযান পরিচালনা করা হবে।” তিনি বলেন, অপরাধ দমন ও সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের কার্যক্রম এখন আরও গতিশীল হয়েছে। মাদক, বাল্যবিয়ে ও আত্মহত্যা—এই তিনটি সামাজিক ব্যাধিকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে। শুধু সভা-সেমিনার নয়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও গণআলোচনার মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সভায় জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নারী ও শিশু নির্যাতন, মাদক নিয়ন্ত্রণ, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, সামাজিক সমস্যা ও চোরাচালান দমন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। জানানো হয়, অক্টোবর মাসে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল সন্তোষজনক। তবে সীমান্ত এলাকায় মাদক ও চোরাচালান দমন অভিযানে বিজিবি, পুলিশ ও প্রশাসনের যৌথ টহল জোরদার করার নির্দেশ দেয়া হয়। সহকারী কমিশনার আশফাকুর রহমান সভায় অক্টোবর মাসের আইনশৃঙ্খলা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে জানানো হয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ছয়টি অভিযানে ১১টি মামলায় ১১ জনকে দণ্ড ও ১ হাজার ৯৫০ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে। সার ব্যবস্থাপনা আইনে ৩৫ হাজার টাকা, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, সড়ক পরিবহন আইনে ৪২ হাজার ১৫০ টাকা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে ৬ হাজার ৫০০ টাকার জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ৩টি এয়ারগান, ১টি শাটারগান, ৫টি সীসা কার্তুজ, ১টি রাইফেল স্কোপ, ৬টি রামদা, ২টি তরবারি, ১টি চাইনিজ কুড়াল, ১টি চাপাতি ও ১টি ঢাল। সভায় জেলা প্রশাসক আরও বলেন, “অপরাধ প্রতিরোধে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে একসাথে কাজ করতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী হলে অপরাধ অনেকটাই কমে আসবে।” সভায় উপস্থিত ছিলেন—পুলিশ সুপার গোলাম মওলা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) এম সাইফুল্লাহ, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমান, ঔষধ প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়ক তাহমিদ জামিল, শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি এম জেনারেল, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি রাজীব হাসান কচি, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নয়ন কুমার রাজবংশী, আলমডাঙ্গা ইউএনও শেখ মেহেদী, দামুড়হুদা ইউএনও তিথি মিত্র, জীবননগর ইউএনও আল আমিন, পাবলিক প্রসিকিউটর মারুফ সরোয়ার বাবু, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিদ্দিকা সোহেলী রশীদ, বিএনপি নেতা আব্দুল জব্বার সোনা, ছাত্রনেতা আসলাম হোসেন অর্ক ও সাংবাদিক শাহ আলম সনি প্রমুখ। সভায় জেলার সার্বিক নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও জনসেবার মানোন্নয়নে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের ওপর জোর দেয়া হয়।
Leave a Reply