এনএনবি : রাশিয়া ও চীনের প্রভাব মোকাবেলায় মধ্য এশিয়ার ৫ টি দেশের নেতাদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজে বৈঠকে বসতে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। বৈঠকটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং কৌশলগত অবস্থান নিয়ে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্র হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র অঞ্চলটিতে রাশিয়া ও চীনের দীর্ঘদিনের দাপট মোকাবেলা করে নিজেদের প্রভাব করায়ত্ব করাসহ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে।
যুক্তরাষ্ট্র মূলত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, জ্বালানি সরবরাহ এবং বাণিজ্য পথ নিশ্চিত করতে মধ্য এশিয়ায় নতুন অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। ২০১৫ সালে চালু হওয়ার পর থেকে, সি৫+১ কূটনৈতিক প্ল্যাটফর্ম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মধ্য এশিয়ার ৫ দেশ – কাজাখস্তান, কিরগিজ প্রজাতন্ত্র, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তানের মধ্যে অর্থনীতি, জ্বালানি ও নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা বাড়িয়েছে। এখন আবার এই দেশগুলোর নেতারা ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র মধ্য এশিয়ার অংশীদারদের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক সম্প্রসারণ এবং সম্পর্ক জোরদারের জন্য যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে। মধ্য এশিয়া অঞ্চলের কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তান- এই পাঁচটি দেশ ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এবং সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতার সংবেদনশীল ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এই অঞ্চলের অবস্থান চীন, রাশিয়া এবং আফগানিস্তানের পাশে এবং জ্বালানি, বিরল খনিজ ও ট্রানজিট রুটের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। মধ্য এশিয়ায় ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য চীন ও রাশিয়ার ওপর এই অঞ্চলের দেশগুলোর নির্ভরশীলতা কমানো। ট্রাম্প ওয়াশিংটনে মধ্য এশিয়ার এই দেশগুলোর বৈঠক করে তাদেরকে একটি বিকল্প পথ দেখানোর চেষ্টা করছেন।
‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’ এর পরিচালক গ্রাসেলিন বাসকারান বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন প্রতিটি দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পাওয়া নিশ্চিত করতে বাণিজ্যিক চুক্তিও করবে।
ট্রাম্প প্রশাসন বিশেষ করে বিরল খনিজের ওপর নজর দিয়েছে। কারণ, এসব খনিজ ব্যাটারি, সামরিক সরঞ্জাম এবং সেমিকন্ডাক্টরের মতো উন্নত প্রযুক্তি উৎপাদনে কাজে লাগে। চীন এবং রাশিয়া যেহেতু এই অঞ্চলের খনি, প্রক্রিয়াকরণ এবং অবকাঠামো ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে। সেখানে ওয়াশিংটন নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে, বলেন বাসকারান। এছাড়াও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ট্রাম্পের বৈটকের আরেক লক্ষ্য নিরাপত্তা ও সামরিক সহযোগিতা জোরদার করা। এ অঞ্চলে, বিশেষ করে আফগানিস্তান সীমান্তে ট্রাম্প মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করতে চান। পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার সীমান্তের কাছে সামরিক উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করাও তার লক্ষ্য। আফগানিস্তানের বাগরাম ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার যে চেষ্টা ট্রাম্প করছেন সেকারণে আফগান সীমান্তবর্তী তাজিকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে তার নিবিড় যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিনিয়োগ, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে মধ্য এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা ট্রাম্পের বৈঠকের আরেক লক্ষ্য।
Leave a Reply