কাগজ প্রতিবেদক ॥ প্রফেসর ডঃ আনোয়ারুল করীম ছিলেন মানবীয় গুনাবলির অধিকারী। বহু মুখি প্রতিভাধারী এই ব্যক্তি ছিলেন পরোপকারী, নিঃঅহংকারী, নির্লভ, মিষ্টভাষী সকলকে কাছে টেনে নিয়ে যাদুকরি আচরনে সকলকে মুগ্ধ করেছিলেন। তিনি দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একজন খ্যাতিমান লেখক, গবেষক ও পান্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। সীমাহীন জ্ঞানচর্চা তাকে আলোকিত করেছিল। তিনি তাঁর সেই জ্ঞানলভ্য আলো দিয়ে কুষ্টিয়াবাসিকে শিক্ষা ও গবেষনায় উদ্বুদ্ধ ও উজ্জিবিত করেছিলেন। নিজেকে শেষ জীবন পর্যন্ত জ্ঞান চর্চার কাজে নিয়োজিত রেখেছিলেন। কুষ্টিয়ারকৃতি সন্তান কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ দেশ বরেন্য শিক্ষাবিদ লেখক, গবেষক, ইসলামী বিশ^বিদ্যলায়ের সাবেক কোষাধক্ষ্য ও নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আনোয়ারুল করীমের স্মরণ সভায় বক্তারা একথা বলেন।কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের আয়োজনে গতকাল সোমবার দুপুরে কলেজের অডিটোরিয়ামে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কলেজেরঅধ্যক্ষ প্রফেসর মোল্লা মোঃ রুহুল আমীন। অনুষ্ঠানে মরহুমের বর্ণিল কর্মময় জীবনের উপর আলোচনায় অংশ নেন মরহুম একমাত্র কন্যা বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব ডঃ সুলতানা আফরোজ, জামাতা সাবেক সচিব শামস আল মুজাদ্দিদ, কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডঃ আব্দুল লতিফ, আমলাসরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ইকবাল হোসাইন, আমলা কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল অধ্যাপক বাদশা জাহাঙ্গীর, বিশিষ্ট আবৃত্তিকার আলম আরা জুঁই, ডঃ আনোয়ারুল করিমের দৌহিত্র জুনাইদাা করিম, অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আলী মোস্তফা, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ডঃ মোহাঃ রোকনুজ্জামান, ইসলামী ষ্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক রোকনুজ্জামান। অনুষ্ঠানের শূরুতে স্বাগতবক্তব্য রাখেন স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল কমিটির আহবায়ক ডঃ মোঃ নবীনুর রহমান খান। স্মরণ সভায় বক্তারা বলেন, ডঃ আনোয়ারুল করিম কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, লালন একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি নদীর নব্যতা ফিরিয়ে আনতে এবং আর্সেনিক মুক্ত সমাজ গড়তে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা এলাকায় দীর্ঘ দিন গবেষনামুলক কাজ করেছেন। ডঃ আনোয়ারুল করীম ছিলেন ধার্মিক ও ইসলামের একজন নিখাদ খাদেম। সামাজিক কর্মকান্ডে তাঁর অবাধ বিচরন ছিল। সাহিত্য চর্চা ও গবেষনায় তিনি যেমন লালন, রবীন্দ্র ও মীর মশাররফকে বিশে^র মাঝে
জাগিয়ে তুলেছিলেন তেমনিভাবে তিনি ছিলেন কুষ্টিয়ার একজন নিবেদিত মানুষ। কুষ্টিয়াকে সারাবিশে^র মাঝে পরিচিতি করতে তিনি রেখেছিলেন অনবদ্যঅবদান। কুষ্টিয়াবাসী তাঁর মত এজন জ্ঞান নক্ষত্রকে হারিয়ে শূন্যতা অনুভব করছেন। বক্তারা আরো বলেন, ডঃ আনোয়ারুল করিম স্বাধীনতা যুদ্ধে একজন সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দিক নির্দেশনায় ভুমিকা রেখেছিলেন। প্রফেসর আনোয়ারুল করীম ইসলামী বিশি^বদ্যালয় ও নর্দান বিশ^বিদ্যালয়ে গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সততা নিষ্ঠা ও আস্থা অর্জনে রেখেছিলেন অনণ্য গুনাবলি। কুষ্টিয়া সরকারী কলেজে তাঁর মত জ্ঞানী প্রিন্সিপাল পেয়ে হয়েছিলাম ধন্য। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তাঁর অমরকীর্তি কর্মময় জীবন আমাদের সকলকে শিক্ষনীয় বার্তা বহন করে যাচ্ছে। তাঁর দেখানো পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তাঁর অপুরনীয় স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। বক্তারা আরো বলেন, কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ নিয়ে ডঃ আনোয়ারুল করিমের উচ্চাংখা আমাদের হৃদয়ে ধারন করে নিয়েছে। কলেজের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের নিয়ে তার আকাশচুম্বী ভাবনা আমাদের মাঝে আশার আলো সঞ্চার করেছে। তাঁর মৃত্যুতে কুষ্টিয়াবাসী একজন যোগ্য অভিভাবককে হারিয়েছেন। যার অপুরনীয় ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। আনোয়ারুল করীমের অপুরনীয় স্বপ্ন পুরনে আমরা তাঁর পথকে অনুসরণ করতে পারলে তাঁর বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে সেই সাথে তিনি পরকালে কামিয়াবী হবেন। অনুষ্ঠানে মরহুম ডঃ আনোয়ারুল করীমের সন্তানাদি, নাতি-নাতনী, সহকর্মী ওশিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া পরিচালনা করেন কলেজ মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা আহসানুর রহমান।উল্লেখ্য গত শনিবার দুপুর ১২টায় ঢাকার ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় ডঃ আনোয়ারুল করিম ইন্তেকাল করেছেন। ঐ দিন রাতে কুষ্টিয়া পৌরগোরস্থানে জানাজা শেষে দাফন করা হয়।
Leave a Reply