কাগজ প্রতিবেদক ॥ সামাজিক উন্নয়ন ও আইন শৃংখলা রক্ষায় সহযোগী হিসেবে আনসার ও ভিডিপি রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ন সংস্থা হলেও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে এই বাহিনীর মধ্যে শৃংখলার বিচ্যুতিসহ পুঞ্জিভুত ক্ষোভ সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। প্রশিক্ষন বিহীনদের জাল সনদ দিয়ে সদস্যভুক্ত, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ডিউটি দিয়ে তাদের ভাতা/বেতনের টাকায় ভাগ বসানো, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, কেনাকাটা, রেশনিংএ অনিয়ম, অভ্যন্তরীন সম্পদ আত্মসাৎসহ নানা খাত হতে অবৈধ প্রক্রিয়ার অর্থ হাতিয়ে নেয়া এই বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিত্যদিনের ঘটনা। সম্প্রতি নিয়ম বহির্ভুত ভাবে স্থানীয় বা জাতীয় পর্যায়ের কোন পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ছাড়াই জেলা এ্যাডজুটেন্ডের কার্যালয় হতে আনসারের মালখানায় রক্ষিত লক্ষ লক্ষ টাকার নানা ধরনের স্ক্র্যাপ মালামাল নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আনসারের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও এসব অভিযোগকারীরা নিরাপত্তার স্বার্থে নিজেদের নাম পরিচয় প্রকাশ করতে চান না। তবে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে জেলা আনসার ও ভিডিপির জেলা কমান্ডেন্ট মো: শফিউল আযম জানান, পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞাপ্তি দেয়া হয়নি এটা ঠিক, তবে আনসারের অফিসিয়াল নোটিশ বোর্ডে দেয়া হয়েছিলো। এঘটনায় শৃংখলা ভঙ্গের ঘটনা ঘটে থাকলে তা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কুষ্টিয়ার বড় বাজার এলাকার পুরাতম মালামাল ব্যবসায়ী পদ্মা আয়রনের স্বত্ত্বাধিকার কামরুজ্জামানের অভিযোগ, ‘আনসারে নিয়ম বহির্ভুত ভাবে ওরা যা খুশি করবে; কারো কিছু বলার নেই। বিশেষ করে আবুল কালাম নামে স্থানীয় এক ভাতাভুক্ত আনসার সদস্যের নেতৃত্বে একটা প্রভাবশালী টিম কুষ্টিয়া আনসার কম্পাউন্ডের মধ্যে অপ্রতিদ্বন্দী রাজার রাজ্য কায়েম করে রেখেছে। এমনকি ওরা বড় সাহেবকেউ গোনে না। তার সামনেই চরম মাস্তানি করে । গত ২১ অক্টোবর দুপুরে আনসারের কিছু স্ক্র্যাপ মালামাল নিলামের সময় কাউকে সেখানে অংশ নিতে দেয়নি। এই নিলামের প্রচারনায় কোন বিজ্ঞপ্তিও প্রচার করা হয়নি। আমি গিয়েছিলাম লোকমুখে শুনে। আমাকে যাওয়া দেখে কালাম গংরা আমার উপর চরম ভাবে ক্ষুব্ধ হয়। এমন অবস্থা যেনো পারলে সরকারের ঘরে কোন টাকা না দিয়ে নাম মাত্র দাম দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল তুলে নিয়ে যায়’। এছাড়াও এই কালাম গংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে, গত জুলাই-আগষ্টে আনসার বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিতে শতাধিক আনসার সদস্যসহ ঢাকায় গিয়ে আনসার বিদ্রোহ ও ঘেরাও কর্মসূচীতে যোগ দেয়। তবে ভাতাভুক্ত আনসার সদস্য আবুল কালাম তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, ‘আনসারের স্ক্র্যাপের নিলাম কিনলেও আমি নিয়ম বহির্ভুত কোন কাজের সাথে জড়িত নই’। কুষ্টিয়া জেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৬মাসের মধ্যে নানা অনিয়ম দুর্ণীতি ও শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগ উঠায় এখান থেকে জেলা কমান্ড্যান্ট পদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়েরর কর্মকর্তাদের বদলী করা হয়। যদিও এসব বদলিকে সরকারী চাকরীর স্বাভাবিক নিয়মেই হয়েছে বলে দাবি করেন কর্মকর্তারা। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এখান থেকে বদলী হওয়া কর্মকর্তাগণ হলেন- জেলা কমান্ড্যান্ট প্রদীপ চন্দ্র দত্ত, দৌলতপুর উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা মো: ফরহাদ, সদর উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, ভেড়ামারা উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা তরুণ কুমার এবং কুমারখালী উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম। এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে নিয়ম বহির্ভুত ভাবে আনসার সদস্যদের তালিকাভুক্তি এবং তাদের জন্য সরকারী বরাদ্দকৃত ভাতার টাকায় ভাগ বসানো। একই ভাবে সদ্য বদলিকৃত ব্যাটালিয়ান সদস্য আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে, আনসার সদস্য কালাম গংয়ের যোগসাজসে মালখানায় রক্ষিত লক্ষ লক্ষ টাকার স্ক্র্যাপ মালামাল বিক্রয় ও আত্মসাৎ এবং রেশন কার্যক্রমে নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আনসার কর্মকর্তা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘এসব বলে কোন লাভ হবে না। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এসব অনিয়মই এখন আনসারের নিয়ম হিসেবে সবাই মনে করে। ভিতরের কথা তো বাহিরে কেউ মুখ খুলে বলতে চান না। এসব বলে শুধু শুধু নিজের ঘারে দোষ কেই বা নিতে চাইবে ? তাছাড়া এসব অনিয়ম নিয় যখনই হৈচৈ হয় তখন, বড় স্যারেরা দুই একজন কর্মকর্তাকে বদলি করেই ওই অধ্যায় ক্লজ করে দেয়’। এসবের সর্বোচ্চ শাস্তি ওই বদলি পর্যন্ত’। আনসার ও ভিডিপি কুষ্টিয়া জেলা কমান্ডেন্ট মো: শফিউল আযম জানান, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়নি এটা ঠিক, তবে আনসারের অফিসিয়াল নোটিশ বোর্ডে দেয়া হয়েছিলো। এখানে সরকারী সম্পদ ও রাজস্ব খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে’। এঘটনায় শৃংখলা ভঙ্গের ঘটনা ঘটে থাকলে তা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।