কুমারখালী প্রতিনিধি ॥ মাদক ব্যবসায় ও সেবনে আসক্ত হয়ে তিলে তিলে নি:শেষ হতে চলেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কিশোর- যুবকেরা। জানাগেছে, ওই গ্রামের কিশোর- যুবকেরা দিনে দিনে পড়াশোনার মনযোগ হারা”েছ আর অনৈতিক কর্মকান্ডের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এলাকার বড়-ছোট কাউকেই তোয়াক্কা করতে চায় না তারা। বুধবার সকাল থেকে সরেজমিনে ঘুরে, বুজর“ক বাঁখই, শিবরামপুর- পুরাতন চড়াইকোল ও দুর্গাপুর গ্রামের অনেক অভিভাবক সহ গ্রামবাসীর সাথে আলাপকালে জানাগেছে, তাদের দিন কাটছে চরম হতাশা ও দুশ্চিন্তায়।
পুরাতন চড়াইকোল গ্রামের বাসিন্দারা (নাম প্রকাশে অনি”ছুক) বলেন, গ্রামীণ খেলাধুলার অতীত ঐতিহ্য ছিল আমাদের গ্রামের। কিš‘ এখন খেলাধুলা নেই। তবে দেদারসে চলছে মাদকের কারবার।
¯’ানীয় বাসিন্দারা জানান, আগে গ্রামের দু’একজনের বির“দ্ধে গাঁজা আর বাংলা মদ সেবনের অভিযোগ পাওয়া যেতো। কিš‘ এখন ইয়াবা, ট্যাপেনডা ট্যাবলেট ও গাঁজায় সয়লাব হয়ে গেছে এলাকা। এ সব নেশার দ্রব্যের ব্যবসায়ি ও খরিদ্দার (সেবনকারী) উঠতি কিশোর-যুবকেরা।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, পুরাতন চড়াইকোল গ্রামের মৃত বক্কার মাষ্টারের ছেলে এস এম রবিন (৩০) ইয়াবার বড় কারবারি। কয়েক বছর যাবৎ চলছে রবিনের এই অবৈধ ইয়াবার ব্যবসা। রাজধানী ঢাকা সহ নিজ এলাকায় একাধিক বার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আটক হয়েছে রবিন। জামিনে মুক্তি পেলে আবারো শুর“ করে একই ব্যেসা। শুর“তে কেনাবেচা করতো রবিন নিজেই। এখন নিজে সহ কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে বলে জানাগেছে।
পুরাতন চড়াইকোল গ্রামের একাধিক সূত্রে জানাগেছে, ইয়াবা ব্যবসায়ী রবিনের একজন কর্মচারীর নাম নিশান (২৩)। সে শিবরামপুর গ্রামের ওয়াজেদ আলীর ছেলে। তার সাক্ষাৎ পেতে খোঁজ করা হয় নিশানের। তাঁকে কোথাও পাওয়া যায়নি। তবে পৌরসভা এলাকায় তার বাবা ওয়াজেদ আলীর সাথে সাক্ষাৎ হয় এ প্রতিবেদকের।
আলাপকালে তিনি (ওয়াজেদ) জানান, ছেলের চিন্তায় চিন্তায় একেবারে শেষ হয়ে গেলাম। ছেলেকে নিয়ন্ত্রণের অনেক চেষ্টা করেছি। ব্যর্থ হয়ে নিজেই অভিযোগ করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছি। কিš‘ মাদক কারবারিরাই ( রবিন) জেল থেকে বের করে নিয়ে আসে। নিশানের মতো আরো অনেকেই আছে মাদক কারবারি রবিনের বিক্রেতা ( কর্মচারী)।
গ্রামের বাসিন্দারা জানান, রবিন শুধু মাদক ব্যবসায়ীই নয়। পাশাপাশি এলাকার শান্তি বিনষ্টকারী। গ্রামের উঠতি কিশোর-যুবকেরা রবিনের মাদক কারবারের ফাঁদে আটকে যাওয়ায় তাদের আচরণ পরিবর্তন হতে চলেছে। পারিবারিক অভিভাবকদের ও এলাকার বড়দেরকে উপেক্ষা করে নিজেদের ই”েছ মতো চলাফেরা করে। গভীর রাতে বাড়িতে ফেরে অধিকাংশ যুবক ও কিশোররা।
পুরাতন চড়াইকোল গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গ্রামের লোকজন নিয়ে তারা সভা ডাকবেন। প্রয়োজনে প্রশাসনের কাছেও যাবেন। গ্রামের রবিন নামের একটা ছেলে ইয়াবার কারবার করছে। তার কাছে বহিরাগত লোকজন আসা যাওয়া করে। মাঝে মধ্যেই বুজর“ক বাঁখই গ্রামের অহিদের ছেলে সুমনের নেতৃত্বে উঠতি কিশোর-যুবকেরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে আসে। এভাবে চলতে থাকলে এলাকায় বড় ধরণের সহিংসতার ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানাগেছে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে মাদক বেচাকেনার বিরোধের জেরে রবিন ও নিশান বুজর“ক বাঁখই গ্রামের রাশেদুলের ছেলে নিরীহ কলেজ ছাত্র রায়হান (২২) কে কুপিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় রায়হানের মাথায় ও পায়ে ১২ টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে রায়হান কুমারখালী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
ইয়াবা কারবারি রবিনের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেন এবং পরিচয় জনার পর কেটে দেন। সেকারণে এবিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে, বুজর“ক দুর্গাপুর বিশ্বাস পাড়া, গোর¯’ানপাড়া ও পুর্বপাড়া এলাকার উঠতি কিশোর-যুবকদের অনেকেই মাদক সেবন ও কারবারে জড়িয়ে পড়েছে। দুর্গাপুর গ্রামের একটি জামে সমজিদের ইমাম মুঠোফোনে অভিযোগ করে বলেন, এই এলাকার যুব সমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তাদের অধিকাংশই গাঁজ, ট্যাপেনডা সহ নানা ধরণের নেশায় আসক্ত। তারা এলাকায় বহিরাগতদের নিয়ে মাদক সেবন করে। চুরি, ছিনতাইয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। ওরা ¯’ানীয় কারো শাসন-বারণ মান্য করে না। এদেরকে ভালোর দিকে ফেরাতে হবে এখনই, অন্যথায়, এলাকার শান্তি -শৃঙ্খলা চরম হুমকিতে পড়বে। বাটিকামারা গ্রামের (নাম প্রকাশে অনি”ছুক) একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী জানান, সারাদিন একটানা মাদক বেচাকেনা চলে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক থেকে প্রাপ্ত বয়স্করা মাদক কিনতে আসে। ¯’ানীয়দের ভাষ্য,৷ মাদকাসক্ত এসব যুবক ও কিশোররা অধিকাংশ সময়ই উত্তেজিত ও আক্রমনাত্মক অব¯’ায় চলাফেরা করে। তারা এলকার কাউকে মান্য করেনা। স্থানীয়রা অনতিবিলম্বে এসব যুবক ও কিশোরদের জন্য মাদকমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ও অভিযান দাবি করেন সর্বস্তরের মানুষের।
Leave a Reply