কাগজ প্রতিবেদক ॥ খুণ, চুরি, লুটপাট আর ছিনতাইর ঘটনা এখন কুষ্টিয়ার নিত্যদিনের খবর। গত ২৫ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত কুষ্টিয়ায় এক সপ্তাহে ছয় খুনের ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে কুষ্টিয়া বাসীর মনে। একটি খুনের সংবাদ হতে না হতেই আরেকটি খুনের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ছে। জনসাধারণ ক্ষোভ প্রকাশ করলেও বেশি ভাগ মানুষই ভীতির মধ্যে আছে। তারা মনে করছেন যেন আগের মত চরমপন্থী এলাকায় পরিণত না হয় এ কুষ্টিয়া। বেশির ভাগই ঘটছে জমিসংক্রান্ত জের ধরে হারাতে হচ্ছে প্রাণ। আছে চুরি-ছিনতাই, ডাকাতি আর মাদককে কেন্দ্র কওে ঘটনাও। এসব হত্যা কান্ডের মধ্যে দৌলতপুর উপজেলায় হয়েছে পাঁচটি। অপর হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে কুষ্টিয়া ইবি থানার শান্তি ডাঙ্গা গ্রামে।
গত ২৭ এপ্রিল দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ইউনিয়ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার কে কেন্দ্র কওে ভয়াবহ সংঘর্ষ ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় প্রতিপক্ষের দেয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় একই গ্রামের ফারুক মন্ডল (২২) আকতার মন্ডল (৪০) চিলমারী গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে এবং দিনুমন্ডল (৬৫) একই গ্রামের দবির মন্ডলের ছেলে। শেখ হাসিনা জাতীয়বার্ন ইনস্টিটিউটে, আব্দুর রহমান কাজীর ছেলে সাইদুল কাজী (৩০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, বিশুমন্ডলের ছেলে ফজলু ডাক্তার ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে এবং জখম ও দগ্ধ প্রায় ১৫ জন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এদেও মধ্যে গত ৩০ এপ্রিল কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় প্রতিপক্ষের দেয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ইন্সটিটিউটে দুজনের মৃত্যু হয়। এরা হলেন আকতার মন্ডল(৪০) চিলমারী গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলেএবংদিনুমন্ডল (৬৫) একই গ্রামের দবির মন্ডলের ছেলে।
এই দৌলতপুর থানাতেই ২৪ এপ্রিল নূ সালাম নামের এক প্রতিবন্ধীর কে বাকারাগলা কেটে গুরুতর আহত করে সোনাইকুন্ডি উত্তরপাড়া জামিয়া তুল মাদ্রাসার পাশে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। পওে তাকে উদ্ধার কওে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ০১মে দিবাগত রাতে তিনি মারা যায়। নূরসালাম এলাকার শুকুর মন্ডলের ছেলে। এ ঘটনায় ২৬ এপ্রিল নুর সালামের মা বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামাদেও আসামী করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত একই এলাকার আবুল বাসারের ছেলে মাসুম রানাকে গ্রেফতার কওে আদালতে সোপর্দ করাহয়েছে।
গত ১ মে কুষ্টিয়াইবি থানারশান্তি ডাঙ্গা গ্রামে ছোট ভাই শহিদুল (২৩) এরশিল(পাথর) আঘাতে বড় ভাই রাশিদুল (৩০) নিহতহয়েছে। পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানাযায় ছোট ভাইয়ের পানির মটর চুরি হওয়া সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সকালে দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে ছোট ভাইয়ের শিল(পাথর) এর আঘাতে বড় ভাই ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। নিহতর রাশিদুল ইবি থানাধীন শান্তিডাঙ্গা গ্রামের খবির মন্ডলের ছেলে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে জোড়া হত্যার রেশ না কাটতেই ফের জোড়া খুনের ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার (২ মে)। পূর্ব শত্রুতা ও জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধওে প্রতিপক্ষেও ধারালো অস্ত্রেও আঘাতে জাকির মোল্লা (৪০) নামের একজন কৃষক নিহতহন। এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানাযায়, জাকির মোল্লা পরিবারের সঙ্গে দীঘর্ দিন ধরে একই এলাকার আবুমন্ডলের লোকদেও জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। সেই বিরোধের জের ধরে মঙ্গলবার সকালে জাকিরের সঙ্গে আবুর কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের লোকদেও ধারালো অস্ত্রেও আঘাতে তিনি নিহত হন। নিহত জাকির মোল্লা কল্যাণ পুর এলাকার আরব মন্ডলের ছেলে।
এছাড়া অপর হত্যাকান্ড টি গত ২ মে কুষ্টিয়া দৌলত পুর পূর্ব ফিলিপনগর গোলাবাড়িয়া নদীর কিনাওে বাল ুচওে বালিচাপা দেয়া লাশ পাওয়া যায়। নিহত ব্যক্তির নাম মো: মারুফ হোসেন (৩৫)। সে দৌলতপুর মন্ডল পাড়ার মো:আশালত হাজীর ছেলে।
উল্লেখ্য নিখোজের ৮ দিন পর মারুফ হোসেনেরগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে দৌলতপুর থানাপুলিশ। এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি মজিবুর রহমান কে ফোন দলেতিনি ফোন রিসিভ করেননি।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো: খাইরুলআলম জানান, স্থানীয়দের বিরাজমান দ্বন্দ্বের জের ধরে পৃথক দুটি ঘটনায় এসব হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। আমরা এ পর্যন্ত ২০জনকে গ্রেফতার করেছি। এছাড়া এসব হত্যাকান্ড ও উচ্ছৃংখল কর্মকান্ডে যারা জড়িত আছে তাদেও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে কুষ্টিয়া শহরের বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও পরিবেশ কর্মি খলিলুর রহমান মজু বলেছেন, বেশ কয়েক বছর পর কুষ্টিয়ার আইনশৃংলা পরিস্থিতির এত অবনতি হয়েছে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই খুন, চুরি, ডাকাতির খবর চোখে পড়ে। তিনি কিছুটা ক্ষোভের সাথে জানান মাত্র দুই বছর আগেও দেখেছি একটা জায়গায় একটা খুন হলে সেই এলাকায় পুলিশের দফায় দফায় অভিযান এবং গ্রাফতার। সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা হাজী রফিকুল আলম টুকু আক্ষেপ করে বলেছেন, পাড়ায় পাড়ায় কিশোর, যুবকদের মোড়ে মোড়ে আড্ডা, মাদক, চুরি, ডাকাতি আর খুণের ঘটনাতো আছেই। পুলিশ যতই বলুক আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। দৌলতপুরে আজ এক মাস গন্ডগোল চলছে একে একে ৪ জন মানুষ চলে গেল। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ জরুরী বলে মনে করেন তিনি।
Leave a Reply