ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ॥ ঝিনাইদহে কমলালেবু চাষ করে লাভবান হচ্ছেন রিফাত হোসেন নামের এক কলেজ ছাত্র। সবুজ পাতার মধ্যে হলুদ ফলের উঁকি যে কারও দৃষ্টি কাড়ে নিঃসন্দেহে। সদর উপজেলার পোড়াবাকড়ি গ্রামে গেলে দেখা মিলবে এ দৃশ্যের। সুস্বাদু এ ফলের ভারে নুয়ে পড়ার মতো অবস্থা প্রতিটি গাছের। যা দেখতে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছে উৎসুক মানুষ। বাগান দেখে মুগ্ধতার শ্বাস ফেলছেন তারা। থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা রসে ভরপুর গাঢ় কমলা রঙের সুমিষ্ট লেবু কিনছেও তারা।
৩ বছর আগে ইউটিউবে কমলালেবুর চাষ দেখে নিজের ১ বিঘা জমিতে দেড়’শ চারা রোপন করেন সদর উপজেলার পোড়াবাকড়ি গ্রামের কলেজ ছাত্র রিফাত হোসেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে নিয়মিত পরিচর্যা আর পরিমিত সারের ব্যবহার করে এ বছর ফলন পেতে শুরু করেছেন তিনি। ফলন আর দাম ভালো পেয়ে লাভের মুখ দেখছেন তিনি। বিদেশ থেকে আমদানি করা ফরমালিন কিংবা রাসায়নিক মেশানো মাল্টায় যখন আস্থা হারিয়েছে মানুষ সেই সময় স্বুসাধু স্বাস্থ্যসম্মত ফল পেয়ে খুশি ক্রেতারা। বিষয়খালী এলাকা থেকে কমলাবাগান দেখতে আসা বসির আহম্মেদ জানান, ফেসবুক থেকে বাগানটা সর্ম্পকে জানতে পারছি। তাই এখানে বেড়াতে আসলাম, আমরা জানি ভারত ও দার্জিলিং এ কমলা লেবুর চাষ বেশী হয়, বাগানটা দেখতে খুবই সুন্দর, এবং কমলা গুলো ক্ষেতে খুব সুস্বাদু। বাহিরের কমলার থেকে আমাদের এখানে যে কমলা চাষ হচ্ছে সেটা অনেক মিষ্টি। এই বাগানে এসে আমি চার কেজি কমলা কিনেছি। একজন কলেজ ছাত্র রিফাত স্বল্প পরিসরে যে এতো সুন্দর একটি বাগান করছে এ আসলেই প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে আছি। মনে হচ্ছে যেনো আমরা বিদেশে কথায়ও আছি। দেশের মধ্যে আছি এটা মনেই হচ্ছে না। ভারত কিম্বা দার্জিলিং এ আছি।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার আদর্শপাড়া থেকে আসা আব্দুল আজিজ খান জানান, পোড়াবাকড়ি গ্রামে আমাদের এক ভাই কমলা বাগান করেছে। এসে দেখে প্রানটা জুড়িয়ে গেলো। আর এই ন্যাচারল খাবার খাওয়ার মজাই আলাদা। তাছাড়া আমি আসছি এধরণে একটা বাগান করার পরিকল্পনার জন্য। তার কাছে কিছু পরামর্শ নেওয়ার জন্য আসছি। বাগানি রিফাত হোসেন জানান, আমি প্রথমে মাল্টা লাগায়, আমাদের কৃষি অফিসারও সেই ভাবে পরিচর্যা জানে না। পরে আমি ওইখান থেকে নেটে ঘাটতে ঘাটতে দেখি আমাদের দেশে চায়না কমলার চাষ হচ্ছে। তার পর শুরু করলাম চায়না কমলা চাষ, এর ফলনও খুব ভালো হচ্ছে, ওই খান থেকে দেখলাম একটা গাছে ৩৫ থেকে ৪৫ কেজি ফল পাওয়া যাচ্ছে। এরপর থেকে আমি কিছু চারা সংগ্রহ করে এক বিঘা জমিতে কমলা চাষ শুরু করলাম। আমার চারার জন্য খরচ হয়েছিল ২৩ হাজার টাকা এবং লোকজন দিয়ে লাগানোর পর ফল ধরার আগ পষন্ত খরচ হয় ৩৬ হাজার টাকা। তার পর ৩ বার সার দিয়েছি, গত ফেব্রুয়ারিতে গাছে ফল ধরছে। আমাদের গাছে যে ফল ছিল তা এখন এখন পষর্ন্ত ১ লাক্ষ ২৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। আশা করা যায় বাজার ভালো থাকলে আরো ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করতে পারবো। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম বলেন, আমাদের এখাকার মাটি চায়নিজ কমলা লেবু তৈরীর উপযোগী। গত ৩ বছর আগে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াবাকড়ি গ্রামে কলেজ ছাত্র রিফাত হোসেন নামের এক কৃষক ভাই আমাদের সহযোগীতায় ১ বিঘা চায়না কমলার বাগান করেছে, এবছর সে বাগান থেকে প্রচুর পরিমান ফল দেখতে পারছি। আমরা বাহিরের দেশের আমদানীকৃত ফলের সাথে যদি তুলনা করি তাহলে তাদের থেকে গুনগত মান কোনো অংশে কম নয়। আমরা ভলো করে পরিচর্যা করতে পারি তাহলে এর গুনগত মান আরেও বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবো। এবং লেবু জাতীয় ফলের জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি ফলন ভালো পেতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদেরকে প্রতিনিয়িত দেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তি ও নানা পরামর্শ ও সহযোগিতা।
Leave a Reply