কুমারখালী প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে নিখোঁজের নয় ঘণ্টা পরে নিজবাড়ি হতে ৫ শত মিটার দুরের শষ্যক্ষেত থেকে আমিরুল ইসলাম ওরফে সবুর (৪৪) নামের এক কৃষকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার সকাল ৮ টার দিকে উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের ভড়ুয়াপাড়া গ্রামের শহিদের বাড়ির পিছনের শষ্যক্ষেত থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত সবুর ওই এলাকার মৃত আলিমদ্দিন শেখের ছেলে। তবে স্বজনদের অভিযোগ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এলাকায় বিরাজমান সামাজিক কোন্দলের জের ধরে প্রতিপক্ষের লোকজন সবুরকে হত্যা করে লাশ ফেলে গেছে। খোঁজনিয়ে জানাগেছে, লাশ উদ্ধারের ঘটনার পর থেকে গ্রামের একটি পক্ষ গা ঢাকা দিয়েছে। তবে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহতের পরিবার, পুলিশ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, জমিতে পানি নেওয়ার জন্য নালা (ড্রেনেজ) কাটাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত শরৎ ও গোলাম সরোয়ারের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা চলে আসছিল প্রায় এক সপ্তাহ যাবৎ। কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর থানায় বসে সমাঝোতাও হয় উভয় পক্ষের। হঠাৎ করে গত রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ আসলে উভয় পক্ষের লোকজন পালিয়ে যায়। পরে সবাই বাড়ি ফিরলেও আমিরুল ইসলাম সবুর বাড়ি ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে অনেক খোঁজাখুঁজি করে। পরে নিজ বাড়ি হতে মাত্র ৫শত মিটার দুরে শহিদের বাড়ির পিছনের শষ্যক্ষেত থেকে সরোয়ার সমর্থিত সবুরের লাশ পাওয়া যায়। নিহতের ছেলে পিয়াস বলেন, কয়েকদিন ধরে নালা কাটা নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা চলছিল এলাকায়।মাঝেমাঝে পুলিশ আসলে বাবাসহ অনেকে পালাত আবার পরে ফিরে আসত।গতকাল রাতে পুলিশ আসলে বাবা পালিয়ে যায় মাঠে।পরে ফিরে না আসলে অনেক খোঁজাখুঁজি করি এবং তার সাথে মুঠোফোনে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করিনি।তিনি আরো বলেন, ভাবলাম কোথায় ঘুমিয়ে আছে সকালে বাড়ি আসবে, কিন্তু সকালে লাশ পেলাম।
এ বিষয়ে গোলাম সরোয়ার বলেন, জমিতে পানি দেওয়ার নালা কাটা নিয়ে বাগুলাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক নবা গ্রুপের সমর্থক শরত, জাহিদ, মিরাজ, বাচ্চুদের সাথে আমার লোকজনের উত্তেজনা চলে আসছিল। কয়েকদফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এরই জের ধরে রোববার বিকেলে নিহত সবুরকে নিতাইলপাড়া এলাকায় পথ আটকে নানা হুমকি-ধামকি দেয় এবং সকালে লাশ পাওয়া যায়। তিনি আরো বলেন, পরিকল্পিতভাবে সবুরকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মাঠে ফেলে দিয়ে গেছে। এবিষয়ে বাগুলাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক নবা মুঠোফোনে বলেন, শরত ছাড়া অন্যরা আমার সমর্থিত। কিন্তু আমার লোকেরা কেউ এই কাজ করেনি। হয়তো প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজেরাই এমন কাজ করেছে। বাগুলাট ইউনিয়নের আরেক আওয়ামী লীগ নেতা আলী হোসেন বলেন, আমি লাশ দেখেছি, রাজনৈতিক ও সামাজিক আধিপত্য বিস্তার নিয়েই হত্যা করা হয়েছে আমার সমর্থিত সবুরকে। কুমারখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রাকিবুল হাসান বলেন, শহিদের বাড়ির পিছন থেকে এক কৃষকের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তিনি আরো বলেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মেতায়েন করা হয়েছে।
Leave a Reply